অনলাইন ডেস্ক: শতবর্ষী বৃদ্ধা মরিয়ম বেগম। ডাক্তার, ব্যাংকার, ইঞ্জিনিয়ার ও ব্যবসায়ীসহ এই বৃদ্ধা মায়ের আট ছেলে ও মেয়েদের সবাই সমাজে প্রতিষ্ঠিত। তারপরও কোনো ছেলের বাড়িতেই মাথা গুঁজবার ঠাঁই হলো না তার। রাস্তায় ফেলে গেলেন সন্তানেরা। পরে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে এলাকাবাসী।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ঢাকার ধামরাই উপজেলার বঙ্গবাজার এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। বৃদ্ধার বাড়ি কুশুরা ইউনিয়নের নরসিংহপুর গ্রামে। ১৫ বিঘা জমি সন্তানদের লিখে না দেওয়ায় এই বৃদ্ধা মাকে রাস্তায় ফেলে দেয় বলে নিশ্চিত করেছেন গ্রামবাসী।

জানা যায়, ওই গ্রামের প্রয়াত মো. আসুরুদ্দিন সরকার নামে এক ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন। তাঁত শিল্পসহ কয়েকশ বিঘা জমি ছিল আসুরুদ্দিন সরকারের। তাই একমাত্র মেয়ে মরিয়ম বেগমের সুখের কথা ভেবে তাকে ১৫ বিঘা জমি লিখে দিয়ে বিলাসবহুল একটি বাড়ি নির্মাণ করে দিয়ে বিয়ে দেন। এরপর জামাতা মো. আব্দুস সালামকে ঘর জামাই হিসেবে বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত করেন।

পরবর্তীতে মরিয়ম বেগম ছয় ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তানের জননী হন। প্রত্যেক সন্তানকেই তিনি লেখাপড়া শিখিয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন। বড় ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আক্তারুজ্জামান একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা। ছোট ছেলে ডা. মো. হুমায়ুন কবীর বিসিএস কর্মকর্তা (ডাক্তার)। তিনি একটি সরকারি আবাসিক হাসপাতালে কর্মরত। সাখাওয়াত হোসেন সাকী ও আব্দুল্লাহেল বাকী নাম করা ব্যবসায়ী ও আলমগীর হোসেন বিদেশে ভালো বেতনে চাকরি করতেন বর্তমানে তিনি ব্যবসা করেন।

তাদের কারও সংসারে কোনো অভাব অনটন নেই। শুধু বৃদ্ধা মাকে ভরণপোষণ করতে যেন তাদের অভাবের শেষ নেই। ক্ষুধারজ্বালায় ছটফট করেন বৃদ্ধা মরিয়ম বেগম। ক্ষুধার যন্ত্রণা মেটাতে ঘুরে বেড়ান এদিক-সেদিক।

সন্তানদের কাছে বিষয়টি বারবার বলায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই শতবর্ষী বৃদ্ধা মাকে চিকিৎসার কথা বলে গাড়িতে তুলে স্থানীয় বঙ্গবাজারের পাশে রাস্তার ওপর ফেলে রেখে যায়। তার গোঙানির শব্দ পেয়ে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় মো. আব্দুল লতিফের বাড়িতে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

এ বিষয়ে বৃদ্ধার ছেলে মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমার মায়ের অনেক বয়স হয়েছে। তার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আমাদের নিয়ে এমন মিথ্যাচার করছেন। আমরা তাকে যথেষ্ট ভরণপোষণ দিচ্ছি ও সেবাযত্ন করছি।’

মো. আব্দুল লতিফ নামে এক গ্রামবাসী বলেন, বৃদ্ধার ছেলেরা যদি তার এত ভরণপোষণ দিচ্ছে ও সেবাযত্ন করছে তাহলে তার এ অবস্থা কেন? শুধু তাই নয়, গ্রামবাসী মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে স্থানীয় বঙ্গবাজারের পাশের রাস্তা থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দিচ্ছেন কেন?